গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা : মরার উপর খাঁড়ার ঘা
            
            
            
            আন্দোলন প্রতিবেদন
শনিবার, ২ এপ্রিল ২০২২ | অনলাইন সংস্করণ
সরকার আবারো গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা করছে। সরকারের দাবি গত অর্থ বছরে (২০২০-২০২১) সার, বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে ৭০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রয়োজন। সে ভর্তুকি পূরণেই গ্যাসের দাম দ্বিগুণেরও বেশি (১১৭% বৃদ্ধি) করার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গত বছর নভেম্বরেই ডিজেল এবং কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির ফলশ্রুতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে পরিবহণের ভাড়াসহ নিত্যপণ্যের দাম। গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দামের সাথে জড়িত রয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ। ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাবে। আওয়ামী-সরকার ১৩ বছরের শাসনামলে অন্তত ৬ বার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। ফ্যাসবাদী আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুৎ-সার-জ্বালানি তেল-পানির মূল্যবৃদ্ধি করেছে। সরকারি হিসেব মতেই গত ১১ বছরে গ্যাসের দাম বেড়েছে ২.৫ গুণ, বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১০ বার (৯০%), গত ১২ বছরে পানির দাম বেড়েছে দ্বিগুণ, জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ৬ বার (৮২%) এবং গত ১০ বছরে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েছে তিনগুণ। ২০০৯ সালে দুই চুলায় ব্যবহৃত গ্যাসের মাসিক দাম ছিল ৪০০ টাকা, যা প্রায় পাঁচ দফায় ১৪৩.৭৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৯৭৫ টাকা। এখন তা বাড়িয়ে ১,০৮৫ টাকা করা হবে। ২০১০ সালে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় মূল্য ছিল ৩ টাকা ৭৬ পয়সা, যা কয়েক দফায় বেড়ে ২০২০ সালে মার্চে ৭ টাকা ১৩ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। এখন আরেক দফা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য। বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১১৭% (এক চুলা ২০০০ টাকা, দুই চুলা ২১০০ টাকা, যা বর্তমান দামের দ্বিগুণেরও বেশি) এবং বিদ্যুতের দাম ৬৭% বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে সরকারের জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা। তাদের অজুহাত আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের (এলএনজি) দাম বহুগুণ বেড়েছে। প্রতিবারই গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাত দিয়েছে সরকার। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাংলাদেশে বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪০০ কোটি ঘনফুটেরও বেশি। সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় ৩০০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে আমদানিকৃত গ্যাসের দৈনিক সরবরাহের পরিমাণ ৭০-৮০ কোটি ঘনফুট, কোনো কোনো দিন ৫০ কোটি ঘনফুট। অর্থাৎ প্রায় ৭০ শতাংশই দেশীয় গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। সুতরাং ৩০ শতাংশ আমদানিকৃত গ্যাসের জন্য প্রতি ঘনমিটারে ১১৭ শতাংশ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির এ প্রস্তাব মূলত জনগণের পকেট কেটে গ্যাস কোম্পানিগুলোর হরিলুটের ব্যবস্থা করা। গ্যাস বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির মূল কারণই হচ্ছে কোম্পানিগুলোর মুনাফা বৃদ্ধি এবং সেই সাথে সরকার এবং তার আমলাদের মুনাফা বৃদ্ধির পথ সুগম করা। গ্যাস-বিদ্যুতের দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলো বরাবরই লাভ করে থাকে। প্রতিবছরেই নিজস্ব মুনাফার পরও তারা সরকারি কোষাগারে কয়েক হাজার কোটি টাকা জমা দিচ্ছে। গত অর্থ বছরে (২০২০-২০২১) শুধু বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাত থেকেই ১০ হাজার কোটি টাকা আয় করেছে সরকার। সুতরাং আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি বা গ্যাস-বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধি - এসব অজুহাত জনসাধারণের সাথে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই গণবিরোধী সরকার বরাবরই আমলা-মুৎসুদ্দি পুঁজিপতিদের স্বার্থেই কাজ করেছে, করছে এবং করবে। ডিজেল এবং কেরোসিন তেলের দাম বৃদ্ধির সময়েও আমরা দেখেছি সরকার দেশি-বিদেশি মালিক শ্রেণির পক্ষ নিয়ে জনগণকে দুর্দশায় ফেলে দিয়েছে। শুধু এই সরকারই নয়, সাম্রাজ্যবাদের দালাল শাসকশ্রেণির সকল সরকারই ক্ষমতায় থেকে বরাবরই জনগণের পকেট কেটে নিজেদের পকেট ভারী করেছে এবং জনজীবন বিপন্ন করেছে। বর্তমানে লাগামহীন দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতির কারণে শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্ত জনগণ হায়-হুতাশে রয়েছেন। আবার গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি হলে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবেই জনজীবনকে বিপর্যস্ত করবে। তাই একথা বলা যায় যে, এই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রেখে গণবান্ধব সরকার হবে - সে আশা করা নিছক বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই এই গণবিরোধী রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ভেঙ্গে শ্রমিক-কৃষক-সাধারণ জনগণের ক্ষমতা এবং সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লব সফল করার মাধ্যমেই জনগণকে এই মুনাফাখোরদের কবল থেকে মুক্ত করা সম্ভব হবে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা : মরার উপর খাঁড়ার ঘা
সরকার আবারো গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা করছে। সরকারের দাবি গত অর্থ বছরে (২০২০-২০২১) সার, বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে ৭০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রয়োজন। সে ভর্তুকি পূরণেই গ্যাসের দাম দ্বিগুণেরও বেশি (১১৭% বৃদ্ধি) করার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গত বছর নভেম্বরেই ডিজেল এবং কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির ফলশ্রুতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে পরিবহণের ভাড়াসহ নিত্যপণ্যের দাম। গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দামের সাথে জড়িত রয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ। ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাবে। আওয়ামী-সরকার ১৩ বছরের শাসনামলে অন্তত ৬ বার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। ফ্যাসবাদী আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুৎ-সার-জ্বালানি তেল-পানির মূল্যবৃদ্ধি করেছে। সরকারি হিসেব মতেই গত ১১ বছরে গ্যাসের দাম বেড়েছে ২.৫ গুণ, বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১০ বার (৯০%), গত ১২ বছরে পানির দাম বেড়েছে দ্বিগুণ, জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ৬ বার (৮২%) এবং গত ১০ বছরে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েছে তিনগুণ। ২০০৯ সালে দুই চুলায় ব্যবহৃত গ্যাসের মাসিক দাম ছিল ৪০০ টাকা, যা প্রায় পাঁচ দফায় ১৪৩.৭৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৯৭৫ টাকা। এখন তা বাড়িয়ে ১,০৮৫ টাকা করা হবে। ২০১০ সালে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় মূল্য ছিল ৩ টাকা ৭৬ পয়সা, যা কয়েক দফায় বেড়ে ২০২০ সালে মার্চে ৭ টাকা ১৩ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। এখন আরেক দফা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য। বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১১৭% (এক চুলা ২০০০ টাকা, দুই চুলা ২১০০ টাকা, যা বর্তমান দামের দ্বিগুণেরও বেশি) এবং বিদ্যুতের দাম ৬৭% বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে সরকারের জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা। তাদের অজুহাত আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের (এলএনজি) দাম বহুগুণ বেড়েছে। প্রতিবারই গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাত দিয়েছে সরকার। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাংলাদেশে বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪০০ কোটি ঘনফুটেরও বেশি। সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় ৩০০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে আমদানিকৃত গ্যাসের দৈনিক সরবরাহের পরিমাণ ৭০-৮০ কোটি ঘনফুট, কোনো কোনো দিন ৫০ কোটি ঘনফুট। অর্থাৎ প্রায় ৭০ শতাংশই দেশীয় গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। সুতরাং ৩০ শতাংশ আমদানিকৃত গ্যাসের জন্য প্রতি ঘনমিটারে ১১৭ শতাংশ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির এ প্রস্তাব মূলত জনগণের পকেট কেটে গ্যাস কোম্পানিগুলোর হরিলুটের ব্যবস্থা করা। গ্যাস বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির মূল কারণই হচ্ছে কোম্পানিগুলোর মুনাফা বৃদ্ধি এবং সেই সাথে সরকার এবং তার আমলাদের মুনাফা বৃদ্ধির পথ সুগম করা। গ্যাস-বিদ্যুতের দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলো বরাবরই লাভ করে থাকে। প্রতিবছরেই নিজস্ব মুনাফার পরও তারা সরকারি কোষাগারে কয়েক হাজার কোটি টাকা জমা দিচ্ছে। গত অর্থ বছরে (২০২০-২০২১) শুধু বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাত থেকেই ১০ হাজার কোটি টাকা আয় করেছে সরকার। সুতরাং আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি বা গ্যাস-বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধি - এসব অজুহাত জনসাধারণের সাথে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই গণবিরোধী সরকার বরাবরই আমলা-মুৎসুদ্দি পুঁজিপতিদের স্বার্থেই কাজ করেছে, করছে এবং করবে। ডিজেল এবং কেরোসিন তেলের দাম বৃদ্ধির সময়েও আমরা দেখেছি সরকার দেশি-বিদেশি মালিক শ্রেণির পক্ষ নিয়ে জনগণকে দুর্দশায় ফেলে দিয়েছে। শুধু এই সরকারই নয়, সাম্রাজ্যবাদের দালাল শাসকশ্রেণির সকল সরকারই ক্ষমতায় থেকে বরাবরই জনগণের পকেট কেটে নিজেদের পকেট ভারী করেছে এবং জনজীবন বিপন্ন করেছে। বর্তমানে লাগামহীন দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতির কারণে শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্ত জনগণ হায়-হুতাশে রয়েছেন। আবার গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি হলে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবেই জনজীবনকে বিপর্যস্ত করবে। তাই একথা বলা যায় যে, এই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রেখে গণবান্ধব সরকার হবে - সে আশা করা নিছক বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই এই গণবিরোধী রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ভেঙ্গে শ্রমিক-কৃষক-সাধারণ জনগণের ক্ষমতা এবং সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লব সফল করার মাধ্যমেই জনগণকে এই মুনাফাখোরদের কবল থেকে মুক্ত করা সম্ভব হবে।
আরও খবর
- শনি
 - রোব
 - সোম
 - মঙ্গল
 - বুধ
 - বৃহ
 - শুক্র